- Editor
- 12:20 21/Jun/2025
- 2 মিনিট সময় লাগবে পড়তে

জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উদযাপনের প্রস্তাবে ১৭৫টি দেশ ভারতের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিল। আজ আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে সে-কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোটা বিশ্বকে একত্র করেছে। আজ বিশাখাপত্তনমে আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের ১১তম বর্ষ উদযাপনে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সমুদ্রতটবর্তী এই শহর থেকে তিনি জাতীয়ভাবে যোগ দিবস উদযাপনের নেতৃত্ব দেন এবং “কমন যোগ প্রোটোকল” সেশনে অংশগ্রহণ করেন প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের সঙ্গে। এই উপলক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশ ও বিশ্বের মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, এই বছর আমরা ১১তম বার ২১ জুনে একসঙ্গে যোগ পালন করছি, এটি খুবই গর্বের বিষয়। তিনি বলেন, যোগের মর্ম হল ‘একতা’, আর সেই একতাই আজ গোটা বিশ্বকে একসূত্রে বেঁধেছে। প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন, আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উদযাপনের প্রস্তাব যখন ভারত জাতিসংঘে তোলেছিল, তখন ১৭৫টি দেশ এর সমর্থনে এগিয়ে আসে। এটা ছিল বৈশ্বিক ঐক্যের এক বিরল দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, “আজ থেকে ১১ বছর আগে শুরু হওয়া এই যাত্রা আজ কোটি কোটি মানুষের জীবনযাপনের অংশ হয়ে উঠেছে।” তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, দৃষ্টিহীনরা ব্রেইলে যোগ গ্রন্থ পাঠ করছে, মহাকাশেও বিজ্ঞানীরা যোগাচর্চা করছেন এবং গ্রামীণ যুবকেরা যোগ অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, সিডনি অপেরা হাউসের সিঁড়ি হোক বা মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া কিংবা মহাসাগরের তীর—সব জায়গা থেকে একই বার্তা শোনা যাচ্ছে, যোগ সকলের জন্য, সীমানার বাইরে, পটভূমির বাইরে, বয়স বা সক্ষমতার বাইরে। বিশাখাপত্তনম সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই শহর প্রকৃতি ও উন্নয়নের মিলনস্থল। তিনি অনুষ্ঠানের সুশৃঙ্খল আয়োজনে জনগণকে অভিনন্দন জানান এবং মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু ও উপমুখ্যমন্ত্রী পবন কল্যাণকে নেতৃত্বের জন্য ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী জানান, অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার ‘যোগন্ধ্র অভিযান’ নামে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী আজ নারা লোকেশ-এর প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে যোগ একটি সামাজিক উৎসব হয়ে উঠতে পারে। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে তাঁর অঙ্গীকার অত্যন্ত অনুকরণীয়।” প্রধানমন্ত্রী জানান, ২ কোটিরও বেশি মানুষ এই অভিযানে যুক্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, “জনসাধারণের এই অংশগ্রহণই বিকশিত ভারতের ভিত্তি। এই বছরের আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের থিম ‘এক পৃথিবী, এক স্বাস্থ্য’-এর তাৎপর্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানব সুস্থতা নির্ভর করে মাটি, নদী, প্রাণী ও উদ্ভিদের স্বাস্থ্যর উপর। যোগ আমাদের এই আন্তঃসম্পর্ককে বোঝায় এবং বিশ্বভ্রাতৃত্বের দিকে পরিচালিত করে। তাঁর কথায়, যোগ আমাদের শেখায় আমরা একা নই, আমরা প্রকৃতির অংশ। নিজের সুস্থতা থেকে শুরু করে সমাজ ও পরিবেশের কল্যাণ পর্যন্ত—এই রূপান্তরের পথই যোগ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় সংস্কৃতি আমাদের শেখায়—‘সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ’। যখন ব্যক্তি স্বার্থ ছেড়ে সমাজের কল্যাণে ভাবতে শেখে, তখনই মানবতার মঙ্গল সম্ভব। বিশ্বের বিভিন্ন অংশে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা ও মানসিক চাপের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, যোগ এমন এক পজ বোতাম যা মানবজাতিকে আবার সঠিক ভারসাম্যে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। তাঁর আবেদন, এই আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হোক ‘মানবতার জন্য যোগ ২.০’-এর সূচনা, যেখানে অভ্যন্তরীণ শান্তিই হবে বৈশ্বিক নীতির ভিত্তি। প্রধানমন্ত্রী জানান, এইমস সহ ভারতের শীর্ষ মেডিকেল প্রতিষ্ঠানগুলো যোগের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠায় গবেষণা করছে। তিনি বলেন, যোগ হৃদরোগ, স্নায়ুবিক সমস্যা, নারীদের স্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং মানসিক সুস্থতার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যোগ পোর্টাল ও যোগন্ধ্র পোর্টালে এক মিলিয়নের বেশি ইভেন্ট রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। যোগকে একটি গ্লোবাল স্বাস্থ্য মডেলে রূপান্তরের অংশ হিসেবে তিনি ই-আয়ুস ভিসা চালুর ঘোষণা দেন।
তিনি জানান, ‘মন কি বাত’-এ তিনি তেল ব্যবহার ১০ শতাংশ কমানোর চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন এবং সকলকে এই উদ্যোগে অংশ নিতে আহ্বান জানান। তেল কম খাওয়া, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য এড়ানো এবং নিয়মিত যোগচর্চা হল সুস্থ জীবনের মূল চাবিকাঠি।
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান, যোগকে একটি জন আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। যেখানে প্রতিটি ব্যক্তি নিজের দিন শুরু করবেন যোগ দিয়ে এবং প্রতিটি সমাজ চাপমুক্ত হওয়ার পথে এগিয়ে যাবে। তাঁর আবেদন, যোগ হোক সেই সুতোর মতো, যা গোটা মানবজাতিকে বেঁধে রাখে। ‘এক পৃথিবী, এক স্বাস্থ্যের জন্য যোগ’ হোক এক বৈশ্বিক সংকল্প।”
এদিন যোগ উদযাপনে উপস্থিত অংশ নিয়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপাল সৈয়দ আবদুল নাজির, মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামমোহন নাইডু, ডঃ চন্দ্রশেখর পেম্মাসানি, জাধব প্রতাপরাও গনপত্রাও, ভূপতি রাজু শ্রীনিবাস বর্মা প্রমুখ বিশিষ্টজনেরা।